সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের বিস্তারিত


 
ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের বিস্তারিতঃ
ছেড়া দ্বীপ যেতে অনেকে স্পীড বোট, লাইফ বোট এবং ট্রলার ব্যবহার করে থাবেন। এছাড় স্থল পথে ছেড়া দ্বীপ যেতে অনেকে বাই সাইকেল, মটর সাইকেল ভ্যান অথবা অটো রিকসা ব্যবহার করে থাকেন। এসকল যানের কোন ওয়েতে কত ভাড়া এবং ছেড়া দ্বীপ যেয়ে কোথায় কোথায় ঘুরে দেখবেন এসকল বিষয়ে বিস্তারিত থাকছে আমাদের আজকের আয়োজনে। সম্পূর্ণ ভিটিওটি দেখার অনুরোধ রইল। 

সমূদ্র পথে কত খরচ হবে ঃ
আমরা এখন অবস্থান করছি সেন্টমার্টিনের জেটি ঘাটে ঘাটে।  মনে রাখাবেন ছেড়া দ্বীপ যাবার উত্তম সময় সকাল ৬:০০ থেকে ৭:০০ টার মধ্যে, কারণ আপনারা হয়তে অনেকেই জানেন সেন্টমার্টিনের থেকে ছেড়া দ্বীপের তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাই সকাল সকাল গেলে সূর্যের তাপ কিছুটা হলেও কম পাবেন। জেটি ঘাট থেকে আপনি যদি স্পীট বোটে করে যেতে চান তাহলে ভাড়া নিবে জন প্রতি ৩৫০ টাকা করে, সময় লাগবে ১০-১৫ মিনিট।  আপনি যদি লাইফ বোটে করে যেতে চান তাহলে জনপ্রতি ভাড়া নিবে ২০০ টাকা, যেতে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। এছাড়া আপনি যদি ট্রলারে যেতে চান তাহলে ভাড়া নিবে যন প্রতি ভাড়া নিবে ১৫০ টাকা করে, সময় লাগবে ৩০-৩৫ মিনিট। এই সকল  ভাড়ার মধ্যে ছেড়াদ্বীপ জাওয়া আসা এবং ঘুরে দেখার জন্য ১ ঘন্টা সময় দিবে।
  
স্থল পথে কত খরচ হবে ঃ
আপনি যদি স্থল পথে ছেড়া দ্বীপ যেতে চান আপনি  বেশ কয়েকটি ওয়েতে যেতে পারবেন। তবে স্থল পথে ছেড়া দ্বীপ যেতে হলে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় মেনে ছেড়াদ্বীপ যেতে হবে। জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ছেড়াদ্বীপটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন স্থল পথে ছেড়াদ্বীপ জাওয়া সম্ভব হয় না।সকাল ৭:০০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভাটার সময়। এই সময়ের মধ্যে ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণ করে আবার ফিরে আসতে হবে। 

আপনি যদি সাইকেল চালাতে পারদর্শী হন তাহলে ৫০ টাকা ঘন্টা প্রতি সাইকেল ভাড়া করে ছেড়া দ্বীপ ঘুরে আসতে পারেন। তবে বালির উপর সাইকেল চালানো বেশ কঠিন। আর আপনি যদি সাইকেল চালাতে পারদর্শী না হন বা সাইকেল চালাতে আগ্রহ প্রকাশ না করেন তাহলে অটো রিকসা বা ভ্যানে করেও ছেড়া দ্বীপ যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে জন প্রতি ভাড়া নিবে ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত, অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন। এই ভাড়ার মধ্যে সেন্টমার্টিন বাজার থেকে ছেড়া দ্বীপ নিয়ে যাবে এবং সেখানে আপনাকে ১ ঘন্টা সময় দিবে ছেড়া দ্বীপ ঘুরে দেখার জন্য এর পর আপনাকে আবার সেন্টমার্টিন বাজারে এনে নামিয়ে দেয়া হবে।

 স্থল পথে মরট বাইকে কত খরচ হবে ঃ
সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপ যাবার জন্য এবং সেন্টমার্টিন ঘুরে দেখার জন্য আর একটি স্পেশাল ওয়ে রয়েছে তা হলো মটর বাইক। এই মটর বাইকে করে ঘুরে দেখতে পারেন ছেড়া দ্বীপ সহ পূরো সেন্টমার্টিন। ভাড়া নিবে ঘন্টা প্রতি ৫০০ টাকা করে। সেন্টমার্টিনে বাইক ভাড়া করলে বাইকটি সম্পূর্ণ আপনার কন্ট্রোলে দিয়ে দিবে। তবে সাবধান.. সমূদ্র বীচের বালির মধ্যে বাইক চালানো কিন্তু সহজ কথা নয়। দূর্ঘটনা ক্রমে যদি আপনার কাছ থেকে বাইক পড়ে যায় এবং বাইকের কোন প্রকার ক্ষয় ক্ষতি হয় তাহলে আপনার কাছ থেকে ক্ষয় ক্ষতির ৩-৪ গুন টাকা নিয়ে নিবে। তাই ভালো বাইক রাইডার না হলে সখের বসে বাইক ভাড়া করবেন না। এতে করে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

ছেড়া দ্বীপ যেতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঃ
স্থল পথে সমূদ্রের পাড় ঘেষে প্রাকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা যাত্রা শুরু করেছি ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে। একদিকে নীল জলরাশীর সমূদ্র আর অন্যদিকে নারিকেল ঝাও ও কেয়া বণ। এ যেন এক অপরুপ সৌন্দ্যের সমাহার। সমূদ্রের  পাড় ঘেষে যেতে যেতে চোখে পড়বে অসংখ্য ট্রলার, এসকল ট্রলারে সারা রাত মাছ ধরার পর ভোর বেলা এখানে ট্রলার নোঙ্গর করে। এসব ট্রলারে করে যে মাছ ধরা হয় তা  ডাকের মাধ্যমে আড়তদারদের কাছে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। 

সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপ পর্যন্ত পুরা রাস্তাই কিন্তু বালুময়, ফলে খুব সাবধানের সাথে মটর বাইকের গতি কমিয়ে রাইড করতে হয়। আপনি যদি দ্রুত গতিতে বাইক রাইড করেন তাহলে বাইক কিন্তু আপনার কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যাবে এবং একসিডেন্ট হবে। তাই বালুর মধ্যে দ্রুত গতিতে বাইক রাইড না করাটাই বেটার।  

 ছেড়া দ্বীপ মূলত সেন্টমার্টিনের মূল ভূখন্ড থেকে একটি বিচ্ছিন্ন প্রবাল দ্বীপ। জোয়ারের সময় এই দ্বীপটি আলাদা একটি দ্বীপে পরিণত হয় আবার ভাটার সময় এই স্থানটি মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত হয়। এজন্য এই দ্বীপটিকে ছেড়া দ্বীপ বলা হয়।  

ছেড়া দ্বীপের বিস্তারিত ঃ 
 আপনারা হয়তে অনেকেই জানেন এই ছেড়া দ্বীপটি মূলত ৩টি খন্ডে বিভক্ত। দুরের দীকে তাকালে আরও দুইটি দ্বীপ চোখে পড়বে। জেয়ারের সময় এই দ্বীপটি ৩টি খন্ডে বিভক্ত হয়। আবার ভাটার সময় এই ৩ খন্ড একসাথে মূল দ্বীপের সাথে যুক্ত হয়। 

২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ছেড়া দ্বীপটিতে একটি মাত্র পরিবার বসবাস করত। কিন্তু পরবর্তীতে ঝড় ও জলচ্ছাসের কথা চিন্তা করে সেন্টমার্টিন কর্তৃপক্ষ এখানে মানুষের বসবাস সম্পূর্ণ নিশিদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন পরিবার এখানে বসবাস করে না। আপনি যদি ছেড়া দ্বীপের একদম শেষ প্রান্তে যেতে চান তাহলে এইখান থেকে প্রয় ৩০ মিনিট পায়ে হেটে ছেড়া দ্বীপের শেষ প্রান্তে যেতে হবে।  তো বন্ধুরা এই ছিলো আমাদের আজকের আয়োজন। পরবর্ততে অন্য কোন দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য তুলে ধরব আপনাদের মাঝে।


কি করবেন?

  • সৈকতে সময় কাটান: সুন্দর বালুচরে বসে বই পড়া, সাঁতার কাটা বা সূর্যাস্নান করা।
  • স্নরকেলিং: স্বচ্ছ পানিতে স্নরকেলিং করে সামুদ্রিক জীবন উপভোগ করা।
  • বার্ডওয়াচিং: বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা।
  • ফটোগ্রাফি: প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা।

কি নিয়ে যাবেন?

  • সানস্ক্রিন
  • সানগ্লাস
  • টাওয়েল
  • স্নরকেলিং গিয়ার (যদি থাকে)
  • ক্যামেরা
  • নগদ টাকা
  • ব্যক্তিগত জিনিসপত্র

মনে রাখবেন

  • ছেঁড়া দ্বীপে কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। তাই খাবার এবং পানি নিজেদের সাথে নিয়ে যেতে হবে।
  • স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
  • পরিবেশ সংরক্ষণে সাহায্য করুন।
  • সর্বদা নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখুন।

শেষ কথা

ছেঁড়া দ্বীপ আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। সুতরাং, সেন্টমার্টিনে গেলে অবশ্যই ছেঁড়া দ্বীপে ঘুরে আসুন।

আপনার ভ্রমণ যেন সফল হয়!

আপনি কি ছেঁড়া দ্বীপ সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চান?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের বিস্তারিত

  ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের বিস্তারিতঃ ছেড়া দ্বীপ যেতে অনেকে স্পীড বোট, লাইফ বোট এবং ট্রলার ব্যবহার করে থাবেন। এছাড় স্থল পথে ছেড়া দ্বীপ যেতে অনেকে ...